কুলধরা, রাজস্থান: এক রহস্যময় প্রেতাত্মা-গ্রামের ইতিকথা

নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ

ভারতের রাজস্থান রাজ্যের জয়সালমের থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি ছোট, প্রাচীন গ্রাম — কুলধরা। আজ এটি সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত এবং পরিণত হয়েছে এক রহস্যময় ও ভৌতিক পর্যটন কেন্দ্রে। ইতিহাস, লোককথা এবং অলৌকিকতা এই গ্রামকে করেছে এক অভিনব গন্তব্য, যা পর্যটকদের কৌতূহল বাড়িয়ে তোলে প্রতিনিয়ত।
কুলধরার ইতিহাস
কুলধরা গ্রামটি ১৩ শতকে পালিওয়াল ব্রাহ্মণদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। তারা ছিলেন খুবই শিক্ষিত, সমৃদ্ধশালী এবং উন্নত কৃষি ও সেচ ব্যবস্থার অধিকারী। গোটা অঞ্চলে প্রায় ৮৫টি গ্রামে এই সম্প্রদায় বসবাস করত। কুলধরা ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম সমৃদ্ধ গ্রাম।
রহস্যময় পরিত্যাগ
১৮২৫ সালের এক রাতে, কুলধরাসহ আশেপাশের সব পালিওয়াল গ্রাম একসাথে হঠাৎ করেই পরিত্যক্ত হয়ে যায়। প্রায় ১,৫০০ মানুষ এক রাতেই গ্রাম ছেড়ে চলে যায় এবং কেউই জানে না তারা কোথায় গিয়েছিল। এত বড় একটি স্থান হঠাৎ করে খালি হয়ে যাওয়ায়, এক রহস্যের জন্ম নেয়।
লোককথা ও অভিশাপ
জনশ্রুতি অনুযায়ী, সেই সময়ের জয়সালমেরে এক নিষ্ঠুর দেওয়ান সালিম সিং এই গ্রামের এক সুন্দরী কন্যাকে বিবাহ করতে চেয়েছিল। তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে, তিনি গোটা গ্রামকে ভয় দেখান এবং চাপ সৃষ্টি করেন। অপমান ও সম্ভাব্য অত্যাচারের ভয়ে, পালিওয়ালরা সিদ্ধান্ত নেয় গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার। তবে যাওয়ার আগে, তারা কুলধরায় এমন এক অভিশাপ দিয়ে যায়, যাতে কেউ আর এখানে বসবাস করতে না পারে।
আজকের কুলধরা
বর্তমানে কুলধরা একটি পর্যটন কেন্দ্র। দিনের বেলায় এখানে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে, কিন্তু সূর্যাস্তের পর স্থানীয় লোকজনও এখানে যেতে সাহস করেন না। অনেকে দাবি করেন, তারা অদ্ভুত আওয়াজ, ছায়া এবং অতিপ্রাকৃত কার্যকলাপ অনুভব করেছেন। ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয় এই স্থানকে “হন্টেড ভিলেজ” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
কেন ঘুরে দেখবেন কুলধরা?
• ইতিহাস ও রহস্য একসাথে উপভোগ করার একটি অনন্য স্থান।
• প্রাচীন রাজপুতানার স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন।
• ফটোগ্রাফি ও ডকুমেন্টারি নির্মাণের আদর্শ স্থান।
• ভৌতিক স্থান ঘুরে দেখার রোমাঞ্চ যারা পছন্দ করেন, তাদের জন্য নিখুঁত গন্তব্য।
কুলধরা শুধুমাত্র একটি গ্রাম নয়, এটি রাজস্থানের অতীত, সংস্কৃতি ও রহস্যের এক জীবন্ত সাক্ষ্য। হাজার বছর আগে গড়ে ওঠা এই গ্রাম, আজও মানুষের কল্পনায় দোলা দিয়ে যায়। সত্যিই, কুলধরা যেন ইতিহাস আর রহস্যের এক মায়াজাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *