নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ
মানুষের চিরকালীন কৌতূহল—মৃত্যুর পরে কী হয়? আত্মা কি সত্যিই থাকে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে বহু শতাব্দী ধরে মানুষ নানা পথ বেছে নিয়েছে। এরই একটি আলোচিত মাধ্যম হলো প্ল্যানচেট। আধুনিক বিজ্ঞান যেমন এ বিষয়ে সন্দেহপ্রবণ, তেমনি বহু মানুষ এর মাধ্যমে অতিপ্রাকৃত জগতের সংস্পর্শ পাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানান।
প্ল্যানচেট কী?
প্ল্যানচেট একটি যন্ত্র বা মাধ্যম, যার সাহায্যে আত্মার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। সাধারণত একটি তক্তার ওপর ইংরেজি বর্ণমালা, সংখ্যা, ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ লেখা থাকে। এক বা একাধিক ব্যক্তি আঙুল রাখে একটি ছোট কাঠ বা গ্লাসের টুকরোয়, যেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অক্ষরের ওপর চলাফেরা করে। বিশ্বাস করা হয়, আত্মা সেই চলাচলের মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর দেয়।
প্ল্যানচেটের ইতিহাস
প্ল্যানচেটের শিকড় উনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপ ও আমেরিকায়। ‘স্পিরিচুয়ালিজম’ নামে একটি ধর্মীয় আন্দোলনের মধ্যে এর প্রসার ঘটে, যেখানে আত্মাদের অস্তিত্ব এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগের কথা বিশ্বাস করা হতো। পরে এটি ‘উইজা বোর্ড’ নামেও পরিচিতি লাভ করে। ভারতে প্ল্যানচেট নিয়ে আগ্রহ শুরু হয় ব্রিটিশ আমলের পর থেকেই এবং আজও এটি এক ধরনের লোক সংস্কৃতির অংশ হয়ে আছে।
প্ল্যানচেটের প্রক্রিয়া
প্ল্যানচেট সাধারণত রাতে, নিরিবিলি পরিবেশে করা হয়। আলো ম্লান রাখা হয়, পরিবেশে একটা রহস্যময়তা তৈরি করা হয়। একজন “মিডিয়াম” (যিনি আত্মার সঙ্গে যোগাযোগে দক্ষ বলে দাবি করেন) উপস্থিত থাকেন। প্রশ্ন করা হয় মৃত আত্মার উদ্দেশ্যে, আর বিশ্বাস করা হয় আত্মা উত্তর দেয় কাঠ বা গ্লাসের চলাফেরার মাধ্যমে।
বিজ্ঞান কী বলে?
বিজ্ঞান প্ল্যানচেটকে একেবারেই অবৈজ্ঞানিক এবং মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যার আওতায় ফেলে। গবেষকরা বলেন, এটি মূলত আইডিওমটর এফেক্ট—যেখানে অবচেতনভাবে ব্যক্তি নিজেই গ্লাস বা কাঠকে নাড়াচাড়া করে, অথচ মনে করে কেউ বা কিছু তা চালাচ্ছে। মানসিক প্রত্যাশা, আবেগ ও পরিবেশের প্রভাব মিলেই এই অভিজ্ঞতা তৈরি হয়।
সংস্কৃতি ও জনপ্রিয়তা
প্ল্যানচেট বহু সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেয়েছে। বাংলা সাহিত্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখায় প্ল্যানচেটের উল্লেখ আছে। আজকের দিনে যদিও অনেকে এটিকে নিছক বিনোদন বা কৌতূহলের বিষয় হিসেবে দেখেন, তবুও এর আবেদন এখনও কমেনি।
প্ল্যানচেট একদিকে যেমন রহস্য ও বিশ্বাসের প্রতীক, অন্যদিকে তা বিজ্ঞানের চোখে একধরনের মনস্তাত্ত্বিক খেলা। কেউ একে ভয় পায়, কেউ মজা করে, কেউ বা সত্যিই আত্মীয়-স্বজনের আত্মার খোঁজ পেতে এতে ভরসা রাখে। তবে সতর্কতা ও যুক্তিবোধের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়াই শ্রেয়, কারণ কল্পনা আর বাস্তবের মাঝের সীমানা খুব সূক্ষ্ম।