নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ
ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাচীন তীর্থস্থানগুলোর মধ্যে শারদা পীঠ এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ধর্মীয় কেন্দ্র। এটি কাশ্মীর উপত্যকার নীলম উপত্যকায় অবস্থিত, বর্তমানে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে (POK)। শারদা পীঠ হিন্দুদের ৫১টি শক্তিপীঠের অন্যতম, যেখানে দেবী পার্বতীর ডান হাত পতিত হয়েছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। শারদা পীঠ কেবল একটি ধর্মীয় কেন্দ্রই নয় বরং এক সময় এটি ভারতীয় দর্শন, জ্ঞানচর্চা ও সংস্কৃত শিক্ষার অন্যতম কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত ছিল।

ইতিহাস ও ধর্মীয় গুরুত্ব
শারদা পীঠের নামকরণ হয়েছে দেবী শারদার নামে, যিনি সরস্বতীর অপর নাম। দেবী শারদা জ্ঞানের দেবী, আর এই স্থান প্রাচীন যুগে এক বিশিষ্ট শিক্ষাকেন্দ্র ছিল। এটি ছিল এমন এক সময়, যখন নালন্দা বা তক্ষশিলার মত শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। শারদা পীঠ-এ তীর্থযাত্রা হিন্দুদের মধ্যে এক পবিত্র অনুশীলন ছিল। বহু সাধু, পণ্ডিত ও তীর্থযাত্রী এখানে আসতেন দেবী শারদার কৃপা লাভ করতে ও আত্মজ্ঞান অর্জনের আশায়।
সংস্কৃতির বাতিঘর
প্রাচীন যুগে শারদা পীঠ ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও বেদচর্চার কেন্দ্র। এটি ‘কাশ্মীর শৈববাদ’ নামক দার্শনিক ধারার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ঐতিহাসিক বিবরণ অনুযায়ী, এক সময়ে এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় বা গুরুকুল ছিল, যেখানে সংস্কৃত সাহিত্য, ব্যাকরণ, জ্যোতিষ ও দর্শনের উপর পাঠদান হত।
স্থাপত্য ও বর্তমান অবস্থা
শারদা পীঠের মন্দিরটি একটি প্রাচীন ও সুদৃঢ় নির্মাণ, যা এখন ধ্বংসপ্রায়। প্রায় ১৩০০ বছর পুরনো এই মন্দির বর্তমানে ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে, কারণ পাকিস্তান অধিকৃত অঞ্চলে এটি সংরক্ষণের যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বর্তমানে ভারতীয় হিন্দু সম্প্রদায় ও বিভিন্ন সংগঠন এই স্থানের পুনঃসংযোগ ও পুনর্গমন দাবি জানাচ্ছে। ভারতের নাগরিকরা যাতে এই পবিত্র তীর্থে তীর্থযাত্রা করতে পারে, সেই দাবি জোরালো ভাবে উঠছে বিভিন্ন স্তরে।

আন্তর্জাতিক গুরুত্ব ও সাম্প্রতিক উদ্যোগ
ভারত সরকার ও কাশ্মীরি পণ্ডিত সমাজ বহুবার শারদা পীঠ করিডর খোলার দাবি জানিয়েছে, যেন ভারতীয় তীর্থযাত্রীরা পবিত্র স্থানটিতে যেতে পারেন ঠিক যেমন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কার্তারপুর করিডর চালু হয়েছে শিখ সম্প্রদায়ের জন্য।
২০২৩ সালে ভারত সরকার শারদা পীঠের একটি প্রতিরূপ মন্দির নির্মাণ শুরু করেছে জম্মু ও কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার তিথওয়াল অঞ্চলে। এটি একটি প্রতীকী প্রচেষ্টা, যাতে কাশ্মীরের হিন্দু ঐতিহ্য ও শারদা সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন ঘটানো যায়।
শারদা পীঠ শুধু একটি শক্তিপীঠ নয়, এটি ছিল জ্ঞান, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার এক উজ্জ্বল বাতিঘর। আজ যখন আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক শিকড় ও ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের কথা বলি, তখন শারদা পীঠের মত স্থানগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। ভবিষ্যতে এই তীর্থস্থানে ভারতীয়দের প্রবেশাধিকার প্রতিষ্ঠা করা গেলে তা হবে ইতিহাসের এক পুনর্লিখন, এক সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ।
