চেনাব রেল সেতু: কাশ্মীরের আকাশ ছোঁয়া সংযোগ

নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ

কাশ্মীর উপত্যকার বুকে গড়ে উঠল এক আশ্চর্য প্রকৌশল কীর্তি—চেনাব রেল সেতু। এটি শুধু ভারতের নয়, গোটা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু রেলওয়ে আর্চ ব্রিজ, যার উচ্চতা ৩৫৯ মিটার, যা আইফেল টাওয়ারের চেয়েও উঁচু।

নির্মাণ ও প্রকৌশল বিস্ময়

  • সেতুটি নির্মিত হয়েছে উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল প্রকল্প (USBRL)-এর অংশ হিসেবে।
  • সম্পূর্ণ সেতুটির দৈর্ঘ্য ১৩১৫ মিটার, যা চেনাব নদীর উপরে একটি বিশাল গিরিখাদ পার হয়ে গিয়েছে।
  • ফ্রান্স, জার্মানি, ভারতসহ বহু দেশের প্রকৌশলীরা একত্রে এটি নির্মাণ করেছেন।
  • সেতুতে ব্যবহার হয়েছে উচ্চমানের ইস্পাত ও কংক্রিট, যা প্রচণ্ড হাওয়া (২৬০ কিমি/ঘণ্টা), ভূমিকম্প এবং এমনকি বিস্ফোরণ সহ্য করতে সক্ষম।

রেল সংযোগে নতুন যুগের সূচনা

  • ২০২৫ সালের ৬ জুন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই সেতু ও রেলপথের উদ্বোধন করেন। এর ফলে কাশ্মীর উপত্যকা ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সারাবছর রেল সংযোগে যুক্ত হয়ে পড়ল।
  • কটরা থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত যাত্রা এখন হবে মাত্র ৩ ঘণ্টায়
  • চালু হয়েছে আধুনিক বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, যা হিমালয় অঞ্চলে প্রথমবার চলছে।
  • এটি একটি অল-ওয়েদার কানেক্টিভিটি, যা শীতকালে তুষারপাতের মধ্যেও চালু থাকবে।

কৌশলগত ও আর্থিক গুরুত্ব

  • ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য এটি একটি কৌশলগত সাফল্য, কারণ দ্রুত রসদ সরবরাহ করা যাবে সীমান্তবর্তী এলাকায়।
  • কৃষক, পর্যটক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য এটি একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
  • বাড়বে পর্যটন, বিশেষত গ্রীষ্মকালে অমরনাথ যাত্রার সময়।

অন্যান্য সেতু

চেনাব সেতুর পাশাপাশি একই প্রকল্পে তৈরি হয়েছে:

  • আনজি খাদ সেতু: ভারতের প্রথম ক্যাবল-স্টে রেলওয়ে সেতু।
  • জয়সওয়াল সেতু: চেনাবের উপর একটি দুই লেনের সড়ক সেতু।

শ্রীনগরের ঐতিহাসিক সেতুগুলোর মধ্যে রয়েছে আমিরা কাদাল, জেইনা কাদাল, হাব্বা কাদাল, বদশাহ ব্রিজ প্রভৃতি, যা শহরের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশ।

চেনাব রেল সেতু কেবল একটি প্রকৌশল কীর্তি নয়—এটি কাশ্মীরের জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা। এটি সংযোগের, উন্নয়নের ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। আকাশ ছুঁয়ে থাকা এই সেতু যেন ভবিষ্যতের কাশ্মীরকে বিশ্ব মানচিত্রে আরও দৃঢ়ভাবে স্থাপন করে দিচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *