
উত্তম মণ্ডলঃ
সময়কাল : খ্রিস্টিয় চতুর্দশ শতাব্দী।
জেলা বীরভূমের ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বর্তমান প্রান্তিক অঞ্চল রাজনগর তখন পূর্ব ভারতের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার। রাঢ়-বাংলার প্রশাসনিক কেন্দ্র তখন এই রাজনগর। সেনরাজ লক্ষ্মণসেনের স্মৃতিবিজড়িত “লক্ষ্মণনগর” পরবর্তীকালে খ্রিস্টিয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর ঐতিহাসিক মিনহাজউদ্দিনের “তবকৎ-ই-নাসিরী” গ্রন্থে আরবি ভাষায় তা “লখনোর” এবং যা ঐতিহাসিক আচার্য যদুনাথ সরকারের আইডেন্টিফিকেশনে আজকের “রাজনগর।” গৌড়-লক্ষ্মণাবতীর শাসক তখন তুগরাল তুগান খান (১২৩৭-১২৪৫ খ্রি:)। আর রাজধানী লক্ষ্মণাবতীর অধীনে থাকা রাজনগরের শাসনকর্তা তখন ফকর-উল-মুলুক করিমউদ্দিন ল্যাংঘ্রি। সেনরাজ লক্ষ্মণ সেন নিজের নামে এই দুটি নগরের প্রতিষ্ঠা করেন–লক্ষ্মণাবতী ও লক্ষ্মণনগর। কেউ কেউ বলেন, রাজা বল্লালসেন পুত্র লক্ষ্মণ সেনের নামে লক্ষ্মণনগরের প্রতিষ্ঠা করেন। রাজনগরে পাটমুড়ির কাছে এখনো রয়েছে লক্ষ্মণ সেনের নামে “লক্ষ্মণপুর ডাঙা।” এখানে রাজা লক্ষ্মণসেনের কাছাড়ি বাড়ি ছিল। কয়েক বছর আগে এখান থেকে পুরোনো পোড়া মাটির পাইপ পাওয়া গেছে। বাংলায় তখন চলছে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মোগল-পাঠান দ্বন্দ্ব। অবশেষে তৃতীয় মোগল সম্রাট আকবরের হাতে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে শেষ পাঠান শাসক দায়ুদ খানের পরাজয়ের পর বাংলা মোগল অধিকারে আসে। এই মোগল-পাঠান দ্বন্দ্বের সময় বাদশাহী সড়ক ধরে বাংলায় ভাগ্যান্বেষণে আসেন দুই পাঠান সর্দার আসাদ খান ও জোনেদ খান। সম্পর্কে তারা দুই সহোদর ভাই। বাংলার পাঠান শাসকরা সুযোগ পেলেই পাশের রাজ্য উড়িষ্যা আক্রমণের চেষ্টা করতো। এজন্য উড়িষ্যার গঙ্গা বংশীয় রাজা তৃতীয় অনঙ্গভীম তাঁর সুদক্ষ সেনাপতি বিষ্ণুর সাহায্যে রাঢ়ের শাসনকেন্দ্র রাজনগর দখল করে নেন। পরে আবার তা পাঠান শাসকদের দখলে আসে। ফের ১২৪৪ খ্রিস্টাব্দে উড়িষ্যারাজ তৃতীয় অনঙ্গভীমের (১২১১-১২৩৮ খ্রি:) পুত্র প্রথম নরসিংহদেব ( ১২৩৮-১২৬৪ খ্রি:) রাজনগর আক্রমণ করলেন এবং রাজনগরের শাসক ফকর-উল-মুলুক করিমউদ্দিন ল্যাংঘ্রি পরাজিত ও নিহত হলেন। প্রথম নরসিংহদেব বীরভূমের বক্রেশ্বর শিব মন্দির ও বর্তমান ঝাড়খণ্ডের দেওঘর বৈদ্যনাথ শিবমন্দির দুটি পুনর্নির্মাণ করিয়ে দেন। এই দুটি মন্দির ছিল গুপ্তযুগের, কিন্তু তা ভেঙে যাওয়ায় নতুন করে মন্দির তৈরি জরুরি হয়ে পড়েছিল। রাজনগরের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে নদী কুশকর্ণী। এই নদী ছিল রাজনগর রাজবাড়ির প্রাকৃতিক পরিখা। নদীর এই “কুশকর্ণী” নামটি উড়িষ্যারাজ নরসিংহদেবেরই দেওয়া। কারণ, উড়িষ্যায় নদীর নাম এইরকম কর্ণী বা কর্ণিকা দিয়ে আছে, যেমন মণিকর্ণিকা। রাজনগর কালীদহের মাঝে এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে উড়িষ্যারাজ প্রথম নরসিংহদেবের রাজনগর বিজয়ের স্মারক বিজয়স্তম্ভ। অনেকে এটি রাজনগরের “বীর রাজা”-র কালীমন্দিরের ধ্বংসাবশেষ বলে ভুল করে থাকেন। আসলে জলের মাঝে এই ধরণের নির্মাণ কাজ হলো উড়িষ্যা দেশীয় রীতি। আর কালীদহের জলে মাছ ধরতে নামার আগে ধীবররা উত্তর দিকে মা কালীর উদ্দেশ্যে আজও প্রণাম করে। এই ধারাবাহিক রীতি প্রমাণ করছে, কালীদহের উত্তর পাড়েই কালীমন্দির ছিল। বর্তমানে সেখানেই পুজো হয়। তবে মন্দির এখন সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন। এই কালীদহের সঙ্গে যোগ ছিল নদী কুশকর্ণীর। কালীদহ ও কুশকর্ণীর মাঝেই ছিল কালীমন্দির। রাজনগরের বীররাজা প্রতিদিন এই কালীদহ সংলগ্ন মন্দির এলাকার বাঁধের জলে স্নান সেরে ইষ্টদেবী মা কালীর পুজো করতেন। এটাই ছিল তাঁর কাছে গঙ্গা। প্রবাদ আছে, বীররাজা প্রতিদিন গঙ্গাস্নানে যেতেন। রাজনগর থেকে গঙ্গা বলতে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের গঙ্গা, বর্ধমানের কাটোয়ার গঙ্গা কিংবা ভাগলপুরের গঙ্গা—এই হচ্ছে কাছাকাছি গঙ্গার ঠিকানা। কিন্তু বীররাজা রাজবাড়িতে নিজের জন্য ভাত বাড়তে বলেই চলে যেতেন গঙ্গাস্নানে এবং স্নান সেরে দেখতেন তখনও ভাত সাজানোর কাজ চলছে। কাজেই এত তাড়াতাড়ি প্রতিদিন এভাবে দূরে গিয়ে গঙ্গাস্নানে যাওয়া অসম্ভব। আসলে ইষ্টদেবী মা কালীর পায়ের কাছেই ছিল যে নদী স্রোত, সেখানেই তিনি “গঙ্গাস্নান” সারতেন। সাধক কবি রামপ্রসাদ বলছেন, “আমার মায়ের পদতলে গয়া-গঙ্গা-বারাণসী।” কুশকর্ণী নদীতে যে একসময় নৌকো চলতো, রাজনগর ছোটবাজারের মীর সাহেবের মাজার প্রাঙ্গণে বটগাছের কোটরে রাখা নৌকোর টুকরোটিই তার প্রমাণ। এ ছাড়া আজকে বীরভূমের শৈবক্ষেত্র বক্রেশ্বরের উষ্ণ প্রস্রবণের জলে পৌষ সংক্রান্তির ভোরে মকর স্নান করেন এলাকার বহু মানুষ এবং সেই জল ঘটি ভরে এনে গ্রাম-ঘরের গৃহস্থ মানুষজন গঙ্গাজ্ঞানে ঘরে ছিটিয়ে চাঁউরি-বাঁউরি ছাড়ান। এই জল তখন তাদের কাছে হয়ে যায় “গাঙ্গের জল” অর্থাৎ গঙ্গার জল। কুশকর্ণী আর খেজুরঝুড়ি—এই দুটি নদী মুড়ে রেখেছে রাজনগরের পাশে গাংমুড়ি গ্রামটিকে। “গাং” অর্থাৎ গঙ্গা দিয়ে মোড়া বলেই গ্রামের নাম হয়েছে “গাংমুড়ি।” সুতরাং, বহরমপুর, কাটোয়া বা ভাগলপুর নয়, কালীদহের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া স্রোতের জলেই গঙ্গাজ্ঞানে গঙ্গাস্নান করতেন রাজনগরের খ্রিস্টিয় চতুর্দশ শতাব্দীর বীরত্বের জন্য জনগণের কাছে পরিচিত “বীররাজা” বসন্ত চৌধুরী। রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণ কুলজি গ্রন্থ অনুসারে রাঢ়ী শ্রেণির ব্রাহ্মণ ছিলেন এই রাজনগররাজ বসন্ত চৌধুরী। উড়িষ্যারাজ প্রথম নরসিংহদেব রাজনগর দখল করে কিছু সংস্কারমূলক কাজ করে স্বীয় প্রতিনিধিকে রাজনগরের রাজপদে বসিয়ে উড়িষ্যা ফিরে যান। রাজনগরে এই হিন্দু শাসনের অবকাশেই বীররাজ বসন্ত চৌধুরীর আবির্ভাব। এই বীররাজ বসন্ত চৌধুরী দীর্ঘদিন তুর্কি আক্রমণ প্রতিহত করে সগৌরবে রাজনগরে রাজত্ব করে গিয়েছেন। ভাগ্যান্বেষী দুই পাঠান ভাই, আসাদ খান ও জোনেদ খান একদিন বীররাজের দরবারে এলেন কাজের খোঁজে। তাঁদের দু’ভাইয়ের সুঠাম চেহারা দেখে সেনাপতির পদ দিলেন। ক্রমে দু’ভাইয়ের মনে জেগে উঠলো রাজ্যলিপ্সা। রাজনগর ফুলবাগানে ছিল বীররাজের ব্যায়ামাগার। রাজা প্রতিদিন ভোরে এখানে ব্যায়াম করতেন। সে সময় এই ঘরে বাইরের লোকের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। একদিন পূর্ব পরিকল্পনামতো ব্যায়ামাগারে ঢুকে আসাদ ও জোনেদ দুই ভাই বীররাজাকে আক্রমণ করলো। কিছুক্ষণ পরেই বীররাজ তা বুঝতে পেরে আসাদকে এমনভাবে পেঁচিয়ে জড়িয়ে ধরলেন, তার ফলে লড়াই করতে করতে দু’জনেই একটি কুয়োর ভিতরে পড়ে গেলেন। দু’জনের একসঙ্গেই মৃত্যু হলো। অপর ভাই জোনেদ ছুটে চললেন রাজবাড়ির অন্দরমহলে। দু:সংবাদ পেয়ে রাণী কালীদহের কাছে রাণীদহের জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মবিসর্জন দিলেন।

মহিমানিরঞ্জন চক্রবর্তী’-র লেখা “বীরভূম রাজবংশ” অনুসারে এরপর পর বলা হয়, হিন্দুর নিষিদ্ধ গোরুর রক্ত মাখা ছুরি ধুয়ে দেওয়ার ফলে কালীদহের জল অপবিত্র হয়ে যায় বলে বীররাজের আরাধ্যা ঈশ্বরী মা কালী পুকুরের পাড় ভেঙে কুশকর্ণী নদীপথে ভেসে চলে গেলেন বীরসিংহপুরে। এখনো বীরসিংহপুরে “মগধেশ্বরী” কালী নামে তিনি অধিষ্ঠিতা রয়েছেন। কালো গ্রাণাইট পাথরে খোদিত এই বিগ্রহের রূপটি হলো “বিপরীত রতাতুরা।” আদিতে এটি ছিল মগধরাজ জরাসন্ধের কালী। শ্রীকৃষ্ণের হাতে জরাসন্ধ নিহত হলে সেই কালী বিগ্রহটি তাঁর কোনো বংশধর বা পুরোহিতের মাধ্যমে বাংলায় আসে। রাজনগর থেকে বীরসিংহপুরে এই কালী বিগ্রহ নদীর জলে ভেসে যাওয়া প্রসঙ্গে বলা যায়, এখানকার কোনো ভক্ত বা পুরোহিত কেউ নদীপথে নৌকোযোগে কালীমূর্তিকে রাজনগর থেকে বীরসিংহপুরে নিয়ে আসেন এবং বিধর্মীর ভয়ে ময়ূরাক্ষীর জলে লুকিয়ে রাখেন। পরবর্তীকালে নদীতে মাছ ধরার সময় ধীবরদের জালে মা কালী উঠে আসেন। কুশকর্ণী নদী রঙ্গাইপুর গ্রামের কাছে ময়ূরাক্ষীতে মিশেছে। এই এলাকা থেকেই ময়ূরাক্ষীর জল পাইপে করে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সরবরাহ করা হয়। খ্রিস্টিয় ষোড়শ শতাব্দীতে বীরসিংহপুরের জমিদার শ্রেণির “রাজা” ছিলেন ক্ষত্রিয় বংশোদ্ভূত বীরসিংহ। এলাকার নাম তখন ছিল “বীরপুর।” পরে রাজা বীরসিংহের নাম অনুসারে বীরপুরের নাম হয় আজকের “বীরসিংহপুর।”

ফিরে আসি রাজকুমারী ভদ্রার কথায়। রাজকুমারী ভদ্রা তখন দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটে চলেছেন। পিছনে জোনেদের অনুচররা। ছুটিতে ছুটতে ঘোর জঙ্গলের মাঝে একটি মা কালীর থানে এসে থামলেন ভদ্রা। সামনে দাঁড়িয়ে একটি প্রকাণ্ড বটগাছ। রাজকুমারী ভদ্রা সেই বটগাছের কাছে আশ্রয় চাইলেন। আর আশ্চর্যজনকভাবে বটগাছটি দু’ভাগ হয়ে গেল। রাজকুমারী ঢুকে গেলেন সেই ফাঁকে। গাছ আবার জোড়া লেগে গেল।তাড়াতাড়ির মধ্যে গাছের ফাঁকে ঢুকতে গিয়ে রাজকুমারীর মাথার কয়েক গাছি চুল বাইরে বেরিয়েছিল। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে বহু মানুষ দেখলো মা কালীর অপার মহিমা। রাজকুমারীর সম্ভ্রম রক্ষা করে মা কালী রাজকুমারী ভদ্রার নামেই ”মা ভদ্রাকালী” নামে পরিচিতা হয়ে গেলেন। পরবর্তীকালে “ভদ্রাকালী” হয়ে যায় “ভদ্রকালী।” কুশকর্ণীর নদীতীরে ঘোর জঙ্গলের মাঝে মা ভদ্রকালী আজও পাষাণমূর্তিতে বিরাজমানা। এই মূর্তি প্রতিদিন একটু একটু করে বড়ো হয়। আজ থেকে প্রায় দুশো বছর আগেও সেই বটগাছটি ছিল। গাছটিতে ছিল অনেকগুলি ফোকর আর তাতে ছিল অজস্র পোকার বাস। পরে সেই গাছটি কেটে ফেলা হয়। তখন গাছের ভিতর থেকে রাজকুমারী ভদ্রার হাড়গোড় বেরিয়ে আসে এবং সেগুলি বর্তমান মন্দিরের ঈশান কোণে পোঁতা হয়। এখানকার পুজোর জন্য বীররাজ বসন্ত চৌধুরী উড়িষ্যা থেকে “ভারতী” পদবিধারী ব্রাহ্মণ আনিয়েছিলেন। তাঁরাই এখানকার পুজো-পাঠ পরিচালনা করেন। প্রতি সপ্তাহের শনি, মঙ্গলবার এবং কালীপুজোর রাতে এলাকাবাসীদের উদ্যোগে ধুমধামের সঙ্গে পুজিতা হোন দেবী ভদ্রকালী। রাজনগর থানার গাংমুড়ি গ্রামের কুশকর্ণী নদীর তীরে রাজনগরের রাজকুমারী ভদ্রা আজও বেঁচে রয়েছেন মা ভদ্রকালীর পাষাণমূর্তির শরীরে।
পরিশিষ্ট
———————————————————————
মোগল শক্তির কাছে পরাজিত হয়েও বাংলার পাঠান জায়গিরদাররা মোগল শাসনকালেও বর্তমান ছিলেন। (আফগানরাই বাংলায় “পাঠান” নামে পরিচিত) এর মূল কারণ, পাঠানদের সামন্ততান্ত্রিক ভূমি ব্যবস্থা। পাঠান শাসকরা তাদের সেনাপতি ও সৈনিকদের নগদ বেতনের বদলে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি জায়গির হিসেবে দিতেন। বখতিয়ার ও তাঁর পরবর্তী শাসকগণ একটি বিশেষ জেলা নিজের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে রেখে বাকিগুলিকে তাঁদের অধীনস্থ কর্মচারিদের হাতে দিতেন। তাঁরা আবার সমগ্র জমি তাঁদের অধীনস্থ ছোট সেনানায়কদের ভাগ করে দিতেন। তাঁরাও নিজেরা সে জমি চাষ করতেন না। স্থানীয় হিন্দু কৃষকদের হাতে সে জমি চাষ করতে দিয়ে বিনিময়ে “কর” নিতেন। এর কারণ ছিল। পাঠান সেনাপতিরা সারা বছর যুদ্ধে ব্যস্ত থাকতেন বলে নিজেদের জমিজমা হিন্দুদের কাছে ইজারা দিতেন। তাই কৃষি-শিল্প-বাণিজ্য সবকিছুই ছিল হিন্দুদের হাতে। এমনকি, বিদ্রোহ ও বাইরের কোনো শত্রুর আক্রমণকালেও হিন্দু কৃষকদের কেউ ক্ষতি করতো না। এইভাবে আফগান পাঠানদের সঙ্গে বাংলার হিন্দু কৃষকদের সুসম্পর্ক বজায় ছিল। এই ভূমি ব্যবস্থার কারণেই পাঠান শাসনের অবসান হলেও বাংলায় পাঠান সেনাপতি ও সেনারা স্বচ্ছন্দে বাস করতেন। মোগলরা এর বদল ঘটাননি, কিংবা বিদ্রোহের আশঙ্কায় তা করেননি।
উপসংহার
————————————————————
রাজত্ব নেই, কিন্তু পাঠান রাজাদের বংশধররা আজও রয়েছেন রাজনগরে। তাঁরা ভারতের ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন এবং এরজন্য চরমভাবে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাঁরা। তাঁরা ছিলেন উদার হৃদয়ের মানুষ। হিন্দু মন্দিরের জন্য তাঁরা জমি দিয়েছেন। রাজনগর থেকে গাংমুড়ি পেরিয়ে রাণীগ্রাম ঢোকার মুখে রাধানগর এলাকায় রাধাগোবিন্দ মন্দিরটি গড়ে উঠেছে তাঁদের দান করা জমিতে। গোঁড়া ব্রাহ্মণ সমাজ “একঘরে” করবে ভেবে রাতের অন্ধকারে রাজনগরের পাঠান রাজাদের দান করা চাল এলাকার গরীব ব্রাহ্মণ পরিবারের কাছে “সিধে” হিসেবে পৌঁছেছে। এই পাঠান রাজবংশের এক রাজা খাজা দেওয়ান আসাদুল্লা খান (১৬৯৭-১৭১৮ খ্রি:) ২১ বছর ১ মাস ২০ দিন রাজত্ব করে রাজকার্য ছেড়ে ফকিরি নেন। রাজনগরের ফুলবাগানের ডাঙায় তাঁর সমাধিস্থল হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের কাছে পরম পবিত্র স্থান “দেওয়ান সাহেবের মাজার” নামে পরিচিত। আর তাঁদের এই উদার হৃদয়ের কারণেই রাজভূমি রাজনগর জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছে আজও সম্প্রীতির শান্তিনগর।
