নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ
বীরভূম জেলার লাভপুর-বোলপুর সড়কের পাশে, ময়ূরাক্ষী নদীর তীরে অবস্থিত গুনুটিয়া নীলকুঠি আজও অতীতের এক নিঃশব্দ সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় আড়াইশো বছর আগে নির্মিত এই স্থাপত্য বাংলার ঔপনিবেশিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বহন করে।

ইতিহাসের পাতায় গুনুটিয়া
১৭৭৫ সালে ব্রিটিশ বণিক এডওয়ার্ড হে ময়ূরাক্ষী ও অজয় নদের জলপথ বাণিজ্যের সুবিধার্থে গুনুটিয়ায় একটি কুঠি নির্মাণ করেন। প্রথমদিকে এটি রেশম ও তুঁত চাষের কেন্দ্র ছিল, যা পরবর্তীতে নীল চাষের কুঠি হিসেবে পরিচিতি পায়। ১৭৮৫ সালে ফরাসি বণিক জেমস ফ্রুশার্ড ২০ হাজার টাকায় কুঠিটি কিনে নেন। ১৮০৮ সালে এটি ব্রিটিশদের হাতে ফিরে আসে এবং জন চিপের তত্ত্বাবধানে নীল চাষের বিস্তার ঘটে।
বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে গুনুটিয়া নীলকুঠির অবশিষ্টাংশ জঙ্গলে ঘেরা অবস্থায় পড়ে আছে। ভগ্নপ্রায় মিনার, ইটের দেয়াল, গোলাবাড়ি, চাষের জলাধার এবং নজরদারির জন্য নির্মিত মিনার আজও অতীতের স্মৃতি বহন করে। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই ঐতিহাসিক স্থাপত্য ধ্বংসের মুখে।

পর্যটন কেন্দ্রের সম্ভাবনা
স্থানীয় বাসিন্দারা গুনুটিয়া নীলকুঠিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এটি সংরক্ষণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে বীরভূমের পর্যটন মানচিত্রে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। তবে কুঠিটি বর্তমানে ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকায় সরকারিভাবে সংরক্ষণ ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কিছু বাধা রয়েছে।
গুনুটিয়া নীলকুঠি শুধুমাত্র একটি স্থাপত্য নয়; এটি বাংলার কৃষক সমাজের ওপর ঔপনিবেশিক শাসনের নিপীড়নের এক জীবন্ত সাক্ষ্য। এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে সংরক্ষণ ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সময়ের দাবি, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অতীতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে।
