চিত্তরঞ্জন পার্ক, দিল্লি — ‘মিনি বেঙ্গল’-এর একখণ্ড গল্প

নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ

ভারতের রাজধানী দিল্লির এক কোণে, গড়ে উঠেছে এক টুকরো ‘বাংলা’ — নাম চিত্তরঞ্জন পার্ক। বাংলার সংস্কৃতি, কৃষ্টি, খাবার আর মানুষের জীবনযাপন যেখানে নিঃশব্দে ঢেউ তোলে, সেটাই ‘মিনি বেঙ্গল’ নামে পরিচিত এই আবাসন।
ইতিহাসের পাতা থেকে
চিত্তরঞ্জন পার্কের গোড়াপত্তন হয়েছিল ১৯৬০-এর দশকে। মূলত পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে আগত উদ্বাস্তু বাঙালিদের জন্য এটি স্থাপন করা হয়েছিল। প্রথমে নাম ছিল ‘ইস্ট পাকিস্তান ডিসপ্লেসড পার্সন্স কলোনি’। পরে দেশপ্রেমিক নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এর নাম হয় চিত্তরঞ্জন পার্ক, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের নামানুসারে।
সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র
এই অঞ্চল এক কথায় বাঙালি সংস্কৃতির এক জীবন্ত সংগ্রহশালা। এখানে শোনা যায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর, দেখা যায় শরৎচন্দ্রের উপন্যাসের চরিত্রদের মত জীবনযাপন। দুর্গাপুজোর সময় চিত্তরঞ্জন পার্ক যেন হয়ে ওঠে কলকাতারই একটি রেপ্লিকা। প্রতিটি প্যান্ডেল, প্রতিমা, আরতির ভঙ্গি — সব কিছুতেই থাকে বাঙালিয়ানার স্পষ্ট ছাপ।
শুধু দুর্গাপুজো নয়, সরস্বতী পুজো, কালী পুজো, নববর্ষ, রবীন্দ্রজয়ন্তী — সমস্ত উৎসবই এখানে বড় করে পালিত হয়। স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নাটক, কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, সংগীতানুষ্ঠান ও বইমেলার আয়োজন করে। এখানকার ‘কালীবাড়ি’, ‘ধূমতলা মন্দির’ ও ‘নবকালী মন্দির’ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চেতনার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।


খাদ্য ও রসনার রাজ্য
চিত্তরঞ্জন পার্কের আরেকটি বড় আকর্ষণ হলো এখানকার খাবার। বাজারে হাঁটলে পাওয়া যায় কচুরি-তরকারি, মাছভাজা, মুড়ি-ঘুগনি, সরষে ইলিশ, চিংড়ি মালাইকারি, সন্দেশ, রসগোল্লা — সব কিছু। এখানকার ১, ২, ৬ নম্বর মার্কেট শুধুই বাজার নয়, একেকটা রসনার মেলা।
বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
বহু প্রজন্ম ধরে চিত্তরঞ্জন পার্ক শুধু বাঙালিদের আবাসস্থল নয়, বাঙালিয়ানার অভিজ্ঞান। তবে এখন এখানে অন্যান্য ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষও বসবাস করছেন, যা এই এলাকার সামাজিক বৈচিত্র্যকেও তুলে ধরছে। তবুও, সত্তরের দশকের গন্ধ, বাঙালির শিকড়ের টান — সেগুলি আজও জীবন্ত রয়েছে এই অঞ্চলে। চিত্তরঞ্জন পার্ক যেন শুধু একটি এলাকা নয়, বরং এটি এক আবেগ, এক গর্ব, এক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার — যার নাম ‘মিনি বেঙ্গল’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *