পশ্চিমবঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা: এক ভয়াবহ ভবিষ্যৎ সংকেত

নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ

বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে উপকূলবর্তী রাজ্যগুলিতে। পশ্চিমবঙ্গ, বিশেষ করে তার উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলি যেমন দক্ষিণ ২৪ পরগণা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং সুন্দরবন—এই হুমকির মুখে। সাম্প্রতিক গবেষণা ও প্রতিবেদনগুলি জানাচ্ছে যে আগামী কয়েক দশকে এই রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায় চলে যেতে পারে।
সমস্যার মূল উৎস
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মূল কারণ হলো—
• গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণতা।
• গ্লেশিয়ার গলন।
• বরফঢাকা অঞ্চলের হিমবাহ গলে যাওয়া।
• মহাসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে জলের সম্প্রসারণ।
এই প্রক্রিয়া পৃথিবীর অন্যান্য উপকূলের মতই পশ্চিমবঙ্গকেও বিপন্ন করে তুলেছে।
পরিসংখ্যান ও ভবিষ্যদ্বাণী
জাতিসংঘের আন্তঃসরকার জলবায়ু পরিবর্তন প্যানেল (IPCC) অনুসারে,
• ২০৫০ সালের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্রপৃষ্ঠ ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
• ২১০০ সালের মধ্যে এই বৃদ্ধি হতে পারে ৮০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত, যা ভয়াবহ রকমের জলস্তর বৃদ্ধি।
বিশেষত সুন্দরবন অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠ যদি ১ মিটার বেড়ে যায়, তাহলে প্রায় ১৭% সুন্দরবন সম্পূর্ণভাবে জলের নিচে চলে যাবে।
প্রভাবসমূহ

১. ভূখণ্ড ক্ষয়: নদী ও সমুদ্রের যৌথ ক্ষয়কার্য ইতিমধ্যেই উপকূল এলাকা গ্রাস করছে।

২. বসতিস্থান হারানো: হাজার হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়বে।

৩. লবণাক্ততা বৃদ্ধি: কৃষিজমিতে লবণাক্ততা বেড়ে গিয়ে চাষাবাদে বিশাল ক্ষতি হতে পারে।

৪. পরিবেশগত বিপর্যয়: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হলে, বাঘ ও বহু প্রজাতির জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হয়ে উঠবে।

৫. উদ্বাস্তু সমস্যা: উপকূল অঞ্চল থেকে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু সংখ্যা বাড়বে।
সমাধানের পথ
• বায়ু দূষণ কমানো ও কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ।
• সবুজ আবরণ বৃদ্ধি ও ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ।
• উপকূলরক্ষা বাঁধ তৈরি ও আধুনিকীকরণ।
• স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি ও পরিকল্পিত পুনর্বাসন।
• বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কৌশল আরও শক্তিশালী করা।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি শুধুমাত্র একটি পরিবেশগত বিষয় নয়, এটি অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং মানবিক সংকটেরও পূর্বাভাস। পশ্চিমবঙ্গের জন্য এটি ভবিষ্যতের এক বড় চ্যালেঞ্জ। এখনই যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে আগামী প্রজন্মের কাছে আমরা একটি বিপর্যস্ত ভূখণ্ড ছেড়ে যাব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *