নয়াপ্রজন্ম প্রতিবেদনঃ
প্রকৃতি ও পর্বতপ্রেমীদের কাছে হিমালয় শুধু নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার নয়, বরং বহু রহস্য ও কিংবদন্তিরও উৎস। এমনই একটি রহস্যময় সত্তা হল ‘ইয়েতি’ — যাকে অনেকে ‘হিম মানব’ বা ‘অ্যাবোমিনেবল স্নোম্যান’ নামেও চেনেন। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নেপাল, ভুটান ও তিব্বতের উচ্চভূমি অঞ্চলের বাসিন্দারা ইয়েতির অস্তিত্ব সম্পর্কে নানা কাহিনি বলে আসছেন।
ইয়েতি কে?
‘ইয়েতি’ শব্দটি এসেছে তিব্বতি শব্দ ‘ইয়ে-থে’ থেকে, যার অর্থ ‘জঙ্গলের মানুষ’। স্থানীয় লোককথা অনুযায়ী, ইয়েতি হল এক বিশালদেহী, লোমশ মানবাকৃতি প্রাণী, যার উচ্চতা ৭ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে এবং তা হিমালয়ের তুষারাবৃত দুর্গম অঞ্চলে বিচরণ করে। অনেকে মনে করেন, ইয়েতি মানুষ এবং বানরের সংকর রূপ, আবার কেউ কেউ বলেন এটি একেবারেই পৌরাণিক।
রহস্যের সূত্রপাত
ইয়েতির অস্তিত্ব নিয়ে প্রথম পশ্চিমা দুনিয়ার আগ্রহ শুরু হয় বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে, যখন অভিযাত্রী ও পর্বতারোহীরা হিমালয়ের বিভিন্ন শৃঙ্গ অভিযানের সময় অদ্ভুত বিশাল পায়ের ছাপ আবিষ্কার করেন। ১৯৫১ সালে বিখ্যাত পর্বতারোহী এরিক শিপটন এভারেস্ট অঞ্চলে এক বৃহৎ অচেনা প্রাণীর পায়ের ছাপের ছবি তুলে প্রকাশ করলে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি
বেশ কিছু বিজ্ঞানী ও জীববিজ্ঞানী ইয়েতিকে একটি মিথ বলেই উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের মতে, ইয়েতির সমস্ত প্রমাণই পরোক্ষ—ছবি, কাহিনি বা সন্দেহজনক পায়ের ছাপ। অনেক ক্ষেত্রেই এই পায়ের ছাপ বরফ গলে যাওয়ার ফলে সৃষ্ট বিকৃত ছাপ হতে পারে। আবার DNA পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে ইয়েতি-দাঁতের নমুনা আসলে হিমালয়ী ভালুকের।
সংস্কৃতিতে ইয়েতি
ইয়েতি শুধু বিজ্ঞান বা কল্পকাহিনিতেই নয়, জনপ্রিয় সংস্কৃতিতেও স্থান করে নিয়েছে। হলিউডের সিনেমা, অ্যানিমেটেড কার্টুন, বই ও ভিডিও গেমে ইয়েতিকে একটি রহস্যময় চরিত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। নেপাল সরকার ১৯৫০-এর দশকে ইয়েতির জন্য একটি রীতিমতো অনুসন্ধান গাইডলাইন পর্যন্ত প্রকাশ করে।
আজও ইয়েতির অস্তিত্ব নিয়ে বিতর্ক শেষ হয়নি। কেউ বলেন, এই রহস্যময় প্রাণী পাহাড়ের নির্জনে লুকিয়ে রয়েছে, কেউ বলেন, এটি নিছকই লোককথা। তবে নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, ইয়েতির রহস্য হিমালয়ের রোমাঞ্চ এবং কল্পনার জগৎকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। হয়তো কোনো একদিন, বিজ্ঞানের প্রগতি এই রহস্যের চূড়ান্ত সমাধান দেবে।
